• ৬ শ্রাবণ ১৪৩২, বৃহস্পতি ২৪ জুলাই ২০২৫ ই-পোর্টাল

Janatar Katha

Banner Add
  • কলকাতা
  • রাজ্য
  • দেশ
  • বিদেশ
  • রাজনীতি
  • খেলার দুনিয়া
  • বিনোদুনিয়া
  • সম্পাদকীয়
  • নিবন্ধ
  • ভ্রমণ
  • রাশিফল
  • টুকিটাকি
  • চিত্রহার
  • বিবিধ
  • ভিডিও
  • এছাড়াও
    • উৎসব
    • ব্যবসা
    • স্বাস্থ্য
    • শিক্ষা
    • প্রযুক্তি
    • হেঁসেল

Short Story

নিবন্ধ

স্বীকারোক্তি (ছোট গল্প)

গাড়িটা গ্রামের পথ ধরতেই মনটা যেন কেমন ভেসে গেল শরতের আকাশে সাদা মেঘের মত। দুপাশে সবুজ ধানক্ষেতের পাশে সাদা কালো ফুলের বন কতদিন পর দেখে মনটা নেচে উঠল। কতদিন পরে গ্রামের মাটির গন্ধ নিল বুক ভরে । প্রায় পনেরো বছর গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে গেছে চেতনা। আর প্রায় আট বছর দেশ ছাড়া। গ্রামের দূর্গা পূজো দেখেনি কতদিন। গ্রামের এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। রাস্তা ঘাট আর আগের এবড়োখেবড়ো নেই, সামান্য বৃষ্টির জলে যেখানে সাঁতার কাটা যেত। স্কুল থেকে ফেরার পথে ওই জমা জলে লাফিয়ে খেলা করে জামা ভিজিয়ে বাড়ি গিয়ে মায়ের কাছে বকা খেয়েছে কতদিন। গ্রামে ঢোকার মুখে গাড়ি থামিয়ে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে মনের জানালা দিয়ে উঁকি দিতে লাগল চেতনার ছেলেবেলা। মেধা আর চেতনা দুই বন্ধু। গ্রামের লোকে বলত হরিহর আত্মা। মেধার মা ছিল না, তাই চেতনার মা ওকে খুব স্নেহ করতেন। চেতনা মাঝে মাঝে ওর মাকে বলত, তুমি আমার থেকে মেধাকে বেশি ভালোবাসো। অন্যদিকে মেধার বাবা চেতনা কে বলতেন তুই আমার আরেক মেয়ে। এইভাবে উভয়ের বাড়িতে উভয়েই ভালোবাসা পেয়েছে। এই ভাবে বড় হতে থাকে দুজনে। চেতনা বরাবর পড়াশোনায় খুব ভালো আর মেধা মোটামুটি। কিন্তু কোনো দিন চেতনাকে হিংসা করেনি। বরং ও খুব খুশি হত চেতনার রেজাল্টে। বলত , কার বন্ধু দেখতে হবে তো। চেতনা মাধ্যমিক পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট করলো। ওর ইচ্ছা ছিল কোনো ভালো স্কুলে পড়ার কিন্তু ওর বাবার সামর্থ্যের বাইরে তা, তাই কাছাকাছি জেলার স্কুলে ভর্তি হলো। মেধা ও একই স্কুলে ভর্তি হলো। যদিও চাইলেই অন্য আরও বড়ো স্কুলে ভর্তি হতে পারতো কিছুতেই যে দুজনে আলাদা হবে না। একই জায়গায় মেডিকেল কলেজে পড়ত ওই গ্রামেরই ছেলে তড়িৎ। ওই ওদের ভর্তির সব ব্যবস্থা করে। তিনজন এক সাথে যাতায়াত করে। পড়াশোনার বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য করে চেতনাকে। চেতনা স্বপ্ন দেখে অনেক বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু ভাবে কি করে সম্ভব? ওদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। বাবা গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করেন আর কিছু জমি জায়গা আছে। আজকের দিনে হয়ত অনেক কিন্তু তখন ওটা সামান্যই ছিল। জানে যে জেলা মানে মেধার বাবা সবরকম সাহায্য করবে ও চাইলে কিন্তু ও চায়না সেটা। ও নিজের স্কলারশিপের টাকাতেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়। তাই পড়াশোনা খুব মন দিয়ে করে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করত হবে। জয়েন্টে ভালো ফল করতে না পারলে সরকারি কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। পড়াশোনা হবে না এইসব ভেবে দিনরাত পরিশ্রম করে আর ওকে সাহায্য করে যায় তড়িৎ। এইভাবে কখন যে দুটি মন কাছাকাছি এসে যায় নিজেরাই বুঝতে পারে না। জানে শুধু মেধা। ওই ওদের মধ্যে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে। এরপর জয়েন্টে খুব ভালো ফল করে চেতনা শিবপুরে পড়তে চলে যায়। মেধা ওখানেই ইকনমিক্স নিয়ে ভর্তি হয়। মেধার বাবা চেতনাকে পড়াশোনা করতে সাহায্য করতে চান। কিন্তু চেতনার বাবা নিজের জমিজমা বিক্রি করে মেয়েকে পড়াবেন ঠিক করেন। তড়িৎ আর মেধা মাঝে মাঝে যায় চেতনার সাথে দেখা করতে। ছুটি ছাটা য় চেতনা চলে আসে গ্রামে। এইভাবে চলতে থাকে ওদের ছাত্র জীবন। তারপর হঠাৎ হয় ছন্দপতন। মেধার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হতেই জানতে পারে ওর বিয়ের কথা। মেধার বাবা একদিন ফোন করে বিয়ের বাজার করার জন্য। আর সেই সময় যে ধাক্কা টা খায় আজও তার রেশ রয়ে গেছে। গাড়িতে তড়িৎ কে দেখে অবাক হয়ে বলে, তুমি! মেধার জন্য শাড়ি কী তুমি পছন্দ করবে? তখন জেঠুর উত্তর শুনে চমকে ওঠে। জেঠু মানে মেধার বাবা বলেন ও না থাকলে বরের পোশাক পছন্দ করবে কে? আচ্ছা তাই বলো। আমি ভাবলাম ---বলে ও চুপ করে যায়। মেধা তখন বলে ওঠ ওঠ গাড়িতে ওঠ। পরে সব জানবি। চেতনা বুঝতে পারে না কি ঘটছে। চেতনা কোনোরকমে ওদের সঙ্গ দেয়। ওকে হোস্টেলে ছাড়ার সময় মেধা বলে আগামী অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে আমার বিয়ে। তোকে কিন্তু দুই তিন দিন আগে আসতে হবে। তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বল? ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওদের গাড়ি ছেড়ে দেয়। চেতনা যেন খুশি হতে পারছে না মেধার বিয়ের কথা শুনে। মনে হচ্ছে কি যেন আড়ালে রাখতে চাইছে মেধা। তড়িৎ কে ফোন করলে ফোন ধরে না। চেতনা আরও উতলা হয়ে পড়ে। ওর রুমমেট সুদেষ্ণা বোঝে কিছু একটা চলছে ওর মধ্যে। বারবার জানতে চায় চেতনার কাছে যে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা? কিন্তু কি করে বলবে ও নিজেই তো কিছু বুঝতে পারছে না। এগিয়ে আসে মেধার বিয়ে। দুদিন আগে না বিয়ের আগের দিন বিকেলে গিয়ে পৌঁছায় বাড়িতে। ও তখনই মেধার বাড়িতে যেতে চাইলে মা বলে কতদিন পরে এলি, আজ আর যেতে হবে না, একদম কাল সকালে যাবি। মায়ের কথা শুনে অবাক হয় চেতনা। যে মা ওকে সবসময় মেধার সাথে থাকতে বলত আজ সেই কিনা বলছে কাল যাবি! বিস্মিত হয় ও। বিস্ময়ের আরও বাকি ছিল যা বিয়ের দিন ঘটতে থাকে। আর একটা ব্যাপার খুব অবাক লাগে মেধা সেই থেকে আর ওর সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। ওর বাবা আবার ফোন করে চেতনা কে আসতে বলেন। সকাল বেলা ওদের বাড়িতে যায় ওকে দেখে খুব খুশি হয় মেধার বাবা। মেধা ও রাগ দেখিয়ে বলে এতক্ষণে আসার সময় হলো তোর? চেতনা কিছু বলে না কাজে লেগে পরে। ওদের বাড়ির আত্মীয়স্বজন সবাই চেতনা কে চেনে। তাই ও সহজেই কাজে লেগে যায়। এক ফাঁকে শুধু জিজ্ঞাসা করে তড়িৎ দা আসবে না? মেধা বলে সময় হলেই আসবে। যেন না আসলেও হয় আরকি। চেতনা আর কিছু বলে না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয় চেতনা মেধাকে সাজাতে বসে, সাজানো হয়ে গেলে বাড়ি যায় নিজে তৈরি হতে। মা, বাবা ওনাদের সাথেই চেতনা কে যেতে বলেন। ও একটু বিশ্রাম করে তৈরি হয়ে মা, বাবার সাথে ওদের বাড়িতে ঢোকে। কে যেন হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় বর আসনের কাছে। বরকে দেখে ও বাকরূদ্ধ হয়ে যায়। এ কাকে দেখছে ও! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ও প্রায় পড়েই যেত ওর বাবা এসে না ধরলে। নিজেকে কোনো রকমে সামলে মেধার কাছে যায়। তখন রাগে, দুঃখে, অভিমানে ঠিক রাখতে পারছিল না। ওর মা, বাবা ওকে ধরে রাখেন। মা হয়ত কিছু আন্দাজ করেছিলেন। মেধা কে অভিনন্দন জানিয়ে কোনো রকমে বাড়ি ফিরে আসে। তিনজনের কিছু খাওয়া হয়না। মেধার বাবা অনুরোধ করেন কিন্তু চেতনা শরীর খারাপ লাগছে বলে চলে আসে। মায়ের কাছে খুবই কাঁদে। মুখে কিছু না বললেও মা সব বোঝেন! পরেরদিন ভোর হতেই চলে যায় কলেজে। সুদেষ্ণা ওকে দেখে অবাক হয়। বোঝে কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। জানতে চাইলে চেতনা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। সব বলে সুদেষ্ণাকে। সুদেষ্ণা ওকে বলে আগে তুই কেঁদে হালকা হয়ে নে তারপর কথা বলব। দুদিন চেতনা বিছানা থেকে ওঠে না। সুদেষ্ণা খাবার এনে ওকে খাওয়ায়। তৃতীয় দিনে ওকে সুদেষ্ণা বলে শোনা তোর ভবিষ্যৎ সামনে। কলেজ ক্যাম্পাসিং এ ভালো ভালো কোম্পানি আসবে তার জন্য তৈরি হতে হবে। ওরা তোর সাথে কী করেছে সেটা ভেবে তুই তোর স্বপ্নটাকে নষ্ট করে দিতে পারিস না। আমি সব মেনে নিতাম যদি এটা মেধা না হয়ে অন্য কেউ হতো। কিন্তু মেধা! আমি ভাবতে পারছি না এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা ও কি করে করল? তাও আমার সাথে। যে কোনো দিন আমাকে হিংসা করেনি! আমি কিছু বুঝতে পারছি না। এই সময় সুদেষ্ণা পাশে না থাকলে হয়তো চেতনার জীবনটা নষ্ট হয়ে যেত। অনেক কষ্টে আবার পড়াশোনাতে মন দেয়। পাশ করার আগেই ভালো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব পেয়ে যায়। প্রথম যায় ব্যাঙ্গালোর, তারপর মুম্বাই আর সেখান থেকে আমেরিকা। এর মধ্যে মা বাবাকে কোলকাতায় নিয়ে চলে আসে। গ্রামের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। দেশে ফিরলেও সুদেষ্ণা ছাড়া কারও সাথে যোগাযোগ রাখেনি।। মহালয়ার কদিন আগে যখন ফোন টা আসে একটু ঘাবড়ে গেছিল অচেনা নম্বর দেখে। ইন্ডিয়ার কল বোঝে, তাই ভাবে মা, বাবার আবার কিছু হলো বোধহয়। কিন্তু ফোন ধরে বুঝতে পারে বৃন্দাবন জেঠু। বলেন, মা আমার একটা অনুরোধ, তুই একবার গ্রামে আয়, মেধা তোকে দেখতে চায়, ও খুব অসুস্থ, মৃত্যু শয্যায়। একথা শুনে চেতনার মনে যত অভিমান ছিল এক নিমেষে কোথায় চলে গেল। রাগ তো কবেই পড়ে গেছে। সোজা দেশে আসার ব্যবস্থা করে;মা, বাবাকেও কিছু জানায়নি। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা গ্রামে। মেধা দের বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই জেঠু বেরিয়ে এলেন। যেন ওর জন্যই অপেক্ষায় ছিলেন। হাত ধরে নিয়ে যান সোজা মেধার কাছে। ওর ঘরে ঢুকে দেখে একদম বিছানার সাথে লেগে আছে প্রানবন্ত মেধা। আয় তনি আমার কাছে আয় বলে কৃশ হাত বাড়িয়ে দেয়। তনি নামটি কতদিন পর শুনল চেতনা। এটা ছিল মেধার দেওয়া নাম। ওর এই অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হয় চেতনার। ও ছুটে গিয়ে হাতটা ধরে। কি হয়েছে তোর? তুই ঠিক ভালো হয়ে যাবি। আমি এসে গেছি আর কিছু হবে না তোর। চেতনার চোখে জল। তুই আমার জন্য কাঁদছিল কেন? আমার তো এটাই হবার ছিল। আমি তোর সাথে যেটা করছি সেটা যে মহাপাপ। বিশ্বাস ঘাতকতা করেছি তোর মত বন্ধুর সাথে। আমার পাপের শাস্তি ভোগ করছি। কেন এমন বলছিস? তুই চুপ কর। বলে চেতনা। আমাকে আজ বলতে দে। আজ তোর কাছে নিজের অপরাধ স্বীকার করবো বলেই আমার প্রাণ রয়েছে এখনো। চেতনা অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করে জেঠু কি হয়েছে ওর? তড়িৎ সামনে আসে, বলে ওকে বলতে দাও কথাগুলো নাহলে ও মুক্তি পাবে না। আমাকে আগে কেন খবর দাওনি তোমরা? কি করে দিতাম? তোমাদের কোনো ঠিকানা জানা ছিল না। তোমাকে যেদিন জানালাম ওই দিন কলকাতায় একটা কাজে গেছিলাম, সেখানেই কাকুর সাথে হঠাৎ দেখা হয়ে যায়। সব জানাই ঠাকুরের। কাকু তোমার নম্বর দেন। চেতনা চুপ করে থাকে। ক্ষীণ গলায় মেধা বলে, বন্ধু হয়ে আমি যা করেছি তার কোনো ক্ষমা হয়না জানি। আমাকে না তড়িৎ কে পারলে ক্ষমা করিস সব শোনার পর। বলতে থাকে মেধা, আমরা তিনজন যখন একসাথে যাতায়াত করতাম করুন আর তড়িৎ বিজ্ঞান বিভাগের হওয়ায় পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা করতে খুব। আমি সেখানে চুপচাপ থাকতাম। ধীরে তড়িৎ তোকে পছন্দ করতে শুরু করে আমিই প্রথম সেটা আন্দাজ করি। আমি নিজে অনুঘটকের কাজটা করি। কিন্তু কোথায় একটা খিচ ছিল মনে। তাই তুই যখন পড়তে চলে গেলি আমরা একসাথে যাতায়াত করতাম ঠিক কিন্তু ওর মুখে সবসময় তোর কথা, তোদের ভবিষ্যতের কল্পনা লেগে থাকত। যে আমি তোকে কোনো দিন হিংসা করিনি, তোর রেজাল্ট ভালো হলে আমি পাড়া মাথায় করেছি আনন্দের চোটে সেই আমার মনে তখন হিংসা বাসা বাঁধে। মনে মনে ভাবি কি করে তড়িৎ আমার হবে। ঠিক সেই সময় সূযোগ পেয়ে যাই। তড়িৎ বিদেশি ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চ শিক্ষা নিতে চায় কিন্তু টাকার জন্য আটকে যাচ্ছে। আমি তখন বাবাকে বললাম টাকা টা দিতে, বাবা এককথায় রাজী হয়ে গেল । জানিস তো আমি কিছু চাইলে বাবা না করে না। আমিই তখন বাবা কে বললাম তুমি শুধু তড়িৎ এর বাবার থেকে আমার আর তড়িৎ এর বিয়ের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসবে। বাবা আমার কথায় কোনো প্রশ্ন না করে রাজী হয়ে গেল এবং কাজটা করেও ফেলল। কিন্তু তড়িৎ যখন এসব জানতে পারল তখন ও সবাইকে সব বললো। ওর মা বাবা কে এবং আমার বাবা কে। আমার বাবা প্রথমে বিশ্বাস করেনি কারণ আমি বাবা কে বলেছিলাম আমরা পরস্পর কে ভালোবাসি। তড়িৎ যখন কিছুতেই বিয়ে করতে চায় না তখন বাবা বুঝতে পারে আমি কোন ফন্দি করছি, বাবা আমাকে অনেক বোঝায় কিন্তু তখন তো আমার মাথায় শয়তান বাসা বেঁধে আছে। আমি আত্মহত্যার হুমকি দিই। ব্যস সবাই চুপচাপ বিয়ে তে রাজী হয়ে যায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত ও আমাকে স্ত্রী বলে স্বীকার করাতো দুর আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক টাও থাকে না। আমি কিছু দিনের মধ্যেই নিজের ভুল বুঝতে পারি। কিন্তু লোকসমাজের জন্য আলাদা হতে পারিনি। আমার একটা ভুল আমাদের তিনটি জীবন নষ্ট করে দিল। আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইবো না। শুধু তড়িৎ কে তুই আর ভুল বুঝিস না। ওর কোনো দোষ ছিল না। এই সত্য টা বলব বলেই আমি বেঁচে আছি। এবার আমি নিশ্চিন্তে মরব। এই বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে মেধা। আর তখনই চন্ডী মন্ডপে বেজে ওঠে বিসর্জনের বাজনা। ঘরে নীরবতা ছেয়ে যায়। চেতনার চোখ থেকে বসু ধারা বয়ে যায়। তড়িৎ নীরবে তাকিয়ে থাকে মেধার মুখ পানে। আর ওর বাবা শুধু বলেন মেধার স্বীকারোক্তি আজ ওকে কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি দিল।

অক্টোবর ০৭, ২০২২
নিবন্ধ

অপরাজেয় (ছোট গল্প)

আজ অনিন্দ্য আর অপরাজেয় দুজনের জীবনের এক বিশেষ দিন। সারা ভারতের নতুন শিল্পীদের যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে আজ ছিল তার ফাইনাল। সেখানে টুবাই অর্থাৎ অপরাজেয় প্রথম হয়েছে। অনিন্দ্য সিঙ্গেল ফাদার হিসাবে আজ সফল। কে বলে বাবারা কিছু পারেনা; মা না থাকলে সন্তান সঠিক ভাবে মানুষ হয়না!! আজ সেই সব কথা কে ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছে অনিন্দ্য। এতে অবশ্যই ওর মা বাবার ভূমিকা ও আছে। আর সব থেকে বড় যে সেই টুবাই সব সময় বাবার কথা শুনে চলেছে। ওদের বাবা ছেলের মধ্যে বোঝাপড়া খুব সুন্দর। টুবাই এর সব বন্ধুরা ও খুব ভালোবাসে অনিন্দ্যকে। এবং বলে কপাল করে বাবা পেয়েছে অপরাজেয়। তবে অনিন্দ্য র চলার পথটা যে এরকম হবে সেটা বোধহয় ও নিজেও কখনো ভাবেনি। পারমিতা আর অনিন্দ্য একই কলেজে পড়তো। কলেজের অ্যানুয়াল প্রোগ্রামের দিন সিনিয়র অনিন্দ্যর মঞ্চে গান গাইতে উঠে চোখ আটকে যায় হরিণ নয়না পারমিতার দিকে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে নতুন ভর্তি হয়েছে ওদের কলেজে। অনিন্দ্যর ব্যাচের একটি মেয়ের মাধ্যমে পরিচয় তার থেকে বন্ধুত্ব। কলেজ শেষের পর বুঝতে পারে দুজনেই যে বন্ধুত্ব পরিণত হয়েছে ভালোবাসায়। দুজন দুজনকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। অনিন্দ্য তখন একটা কলেজ ক্যাম্পাসিং এ একটা ভালো কোম্পানিতে জয়েন করেছে আর পারমিতার ফাইনাল ইয়ার। অনিন্দ্য পারমিতাকে বলে ওর পরীক্ষা হয়ে গেলে বাড়িতে বিয়ের কথা বলবে। কিন্তু পারমিতার ইচ্ছা বিয়ে টা পরে করবে। তাই অনিন্দ্য আর এগোয় না। অনিন্দ্য অফিস আর পারমিতা কলেজ সামলে নিজেদের জন্য সময় বের করে দেখা করে। এইভাবে কাটতে থাকে সময়। অনিন্দ্য এরমধ্যে একটা ব্যাপার বোঝে পারমিতা খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী। ও আরও পড়তে চায়,মাস্টার্সে ভর্তি হয়। পারমিতা চায় অনিন্দ্য এম বি এ করে আরও উন্নতি করুক চাকরিতে। কিন্তু অনিন্দ্য ভালোবাসে গান। তাই ও বেশি উন্নতি চায় না। বলে কি হবে বেশি উন্নতি করে , যদি নিজের মত করে বাঁচতেই না পারলাম। পারমিতা নানাভাবে বোঝায় কিন্তু অনিন্দ্য একইভাবে বলে। আসলে ছোটো থেকে গান নিয়ে বেড়ে ওঠা অনিন্দ্য গান ছাড়া ভাবতে পারে না। তাই মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেটা চাকরির ইঁদুর দৌড়ে সামিলহয় না। পারমিতা মাস্টার্স করার পর একটা খুব ভালো চাকরি পায়। এর মাঝে ওরা রেজিস্ট্রি টা করে নিয়ে ছিল। পারমিতা চাকরি পাওয়ার পর ওর বিত্তশালী বাবা যখন বিয়ের জন্য বলেন তখন পারমিতা বাবাকে সব বলে। বাবা রাজী হয় না। পারমিতা ও খুব জেদি, ও একদিন অনিন্দ্যর কাছে চলে আসে। অনিন্দ্যর মা বাবা ওকে আদর করে ঘরে তোলেন। একটা ঘরোয়া অনুষ্ঠান করে ওদের বিয়ে টা হয়ে যায়। ধনীর দুলালী পারমিতার অনেক অসুবিধা হয় ওদের ওখানে; প্রথম প্রথম মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেনি যে তা নয়। কিন্তু পার্থক্য বেশি হলে মানিয়ে নেওয়া কঠিন। পারমিতার সেরকম সমস্যা হত থাকে বিয়ের এক বছরের মধ্যে। অনিন্দ্য বুঝতে পারে তাই ও চেষ্টা করে পারমিতার জন্য একটু অন্যরকম করে ভাবতে। পারমিতা যেন এক বছরের মধ্যে হাঁপিয়ে ওঠে। ওর অভ্যাস গুলো যে অন্যরকম। ওর মত করে যাতে থাকতে পারে অনিন্দ্য সে জন্য কোম্পানির ফ্ল্যাটে চলে যায় ওকে নিয়ে।দেখতে দেখতে বিয়ের পাঁচ বছর হয়ে যায়। এমন সময় একদিন পারমিতা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তার দেখালে জানতে পারে ও মা হতে চলেছে। এই খবর শুনে অনিন্দ্য খুব খুশি হয়। ওর মা বাবাও খুব খুশি হয়। অনিন্দ্য এই খবরটা পারমিতার মাকে জানায়। ওনার সব ভুলে আনন্দে মেতে ওঠেন। কিন্তু পারমিতা খুশি হতে পারে না। ও বলে এই বাচ্চা ও চায় না। ওর কেরিয়ারের এখন উন্নতির সময় ও ঝামেলা নিতে চায় না। কিন্তু সবাই ওকে অনেক বোঝায়, আর তাতে ও রাজী হয় তবে একটা শর্তে। বাচ্চার ছমাস হয়ে গেলে আর কোনো দায়িত্ব ও নেবে না। তাতেই অনিন্দ্য রাজী হয়। অনিন্দ্য ভাবতে থাকে এ্ কোন পারমিতা! যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল এ তো সে নয়। বাচ্চাকে দেখতে সারাদিনের আয়া রাখলো। বাচ্চার দিকে যেন পারমিতার খেয়াল নেই। ছেলের যখন দুবছর বয়স তখন কর্মসূত্রে বিদেশ চলে গেল পারমিতা। যাবার আগে শুধু বলে গেল অনিন্দ্য কে তোমার ছেলে কে তোমার মত করে মানুষ করো। সেই থেকে আজ পর্যন্ত অনিন্দ্য, ওর ছেলে টুবাই এর সব। অবশ্য ওর মা বাবা র অবদান কম নয়। পারমিতার চলে যাবার খবর পেয়ে অনিন্দ্য র মা বাবা ওর কাছে চলে আসেন নাতি কে সামলাতে। পারমিতার মা বাবা ও আসতেন। মেয়ের এই ব্যবহার ওনাদের ও কষ্ট দিয়েছিল। অনিন্দ্য ছেলেকে যখন সঙ্গীত জগতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় তখন ওর শ্বশুর মশায় আপত্তি জানায়। তারপর থেকে যোগাযোগ আবার কমে যায়। এইভাবে অনিন্দ্য র লড়াই শুরু হয়। টুবাই অর্থাৎ অপরাজেয় একটু বড়ো হয়ে যখন মায়ের কথা জানতে পারে আত্মীয়দের মাধ্যমে তখন থেকেই ও ঠিক করে জীবনে কিছু করতে হবে যাতে মা কে বোঝানো যায় বাবা সঠিক ভাবে ওকে মানুষ করেছে। পড়াশোনায় যথেষ্ট ভালো , তার সাথে বাবার মতো গান করে খুব ভালো। ও পড়াশোনার সাথে গানটাকে ও সমান গুরুত্ব দেয়। আর ওর এই কাজে সবসময় ওর পাশে থাকে ওর বাবা। তাই স্কুলে ওর সব শিক্ষকরা ওকে খুব স্নেহ করেন। ক্লাসে প্রতি বছর প্রথম হয় তার সাথে যেকোনো সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা মানেই অপরাজেয় থাকবেই আর নাম সার্থক করে আসবে পুরস্কার হাতে নিয়ে। আজকের দিনটিও সেই রকমই একটা দিন। যেখানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে ও প্রথম হয়েছে। গত কয়েক মাস বাড়ির বাইরে থেকেছে মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছে এই সফলতা পাবার আশায়। আজ ও সফল হয়ে। আজ সবাই এসেছে এই অনুষ্ঠানে। নাম করা একটা চ্যানেল লাইভ দেখাচ্ছে প্রোগ্রামটা। স্টেজে যখন ওর নাম ঘোষণা করা হয় তখন অনিন্দ্যর চোখে জল আসে আনন্দ আর উত্তেজনায়। অপরাজেয় রুদ্র কে যখন কিছু বলতে বলা হয়। পনের বছর বয়সের ছেলেটা যেন হঠাৎ করেই অনেক বড়ো হয়ে ওঠে। ও বলে আজ আমি যার জন্য এই সাফল্য পেয়েছি আগে তাকে ডেকে নিতে চাই, আমার বাবা শ্রী অনিন্দ্য রুদ্রকে। যার আত্ম ত্যাগ আর আমার প্রতি বিশ্বাস আজ আমাকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। অপরাজেয় র সাথে স্টেজের অ্যাঙ্কর ডাকতে থাকে অনিন্দ্য কে; আর অগনিত দর্শক করতালি দিয়ে বাবা ছেলের এই সাফল্যকে অভিনন্দন জানায়। অন্যদিকে পনেরো বছর বিদেশে থেকে দুদিন আগে দেশে ফিরে যখন এই অনুষ্ঠানের কথা জানতে পারে, নিজেকে আটকাতে পারে না। অনুষ্ঠানের স্পনসর হওয়ার দরুন সূযোগ ছিল তার সদ্ব্যবহার করে এক মা যে একসময় নিজের কেরিয়ারের জন্য শিশু সন্তান কে ফেলে বিদেশে পাড়ি দিয়ে ছিল। আজ অনুষ্ঠানের শেষে যখন সবাই বাবা আর ছেলেকে অভিনন্দন জানাচ্ছে তখন কর্মজীবনে সফলতার শিখর ছুঁয়েও ভীষণভাবে নিঃসঙ্গ, হতাশাগ্রস্ত পারমিতা চোখ ভর্তি জল নিয়ে একা নিজের গাড়িতে ওঠে। আজ চাইলেও আর যেতে পারে না নিজের ফেলে আসা ঘরে। তবে এটা আজ পারমিতা নিজের কাছে স্বীকার করে যে অনিন্দ্য ঠিক ছিল আর আজও ওই সঠিক। ও ঠিকই বলত যে সফলতা তাকেই বলে যে কাজ করে আমি এবং আমাকে ঘিরে থাকা সবাইকে খুশি করতে পারব। অর্থ আর ক্ষমতাই সব নয়। অর্থবান আর ক্ষমতাবান মানুষের চারপাশে অনেকে থাকে কিন্তু কেউ নিঃস্বার্থ ভাবে থাকে না। একটা সময় বুঝতে পারে যে সে বড্ড একা। আজ পারমিতা কর্মজীবনে উন্নতির শিখরে পৌঁছিয়েছে ঠিকই কিন্তু ও আজ খুব একা। আজ ভাবে একটা সুন্দর সুখী জীবন তো পেতে পারত; আজ ও সন্তান গর্বে গর্বিত হতে পারত, সে ও নিজের হাতে বন্ধ করে দিয়েছে। খুব ইচ্ছা হচ্ছে আজ ছেলেটাকে একবার বুকে জড়িয়ে ধরতে। ফোনটা বের করে কল করে একটা -- আমাকে অপরাজেয় রুদ্র রায় নম্বর টা হোয়াটসঅ্যাপ করো। মূহুর্তে টুং করে নম্বর টা এসে যায়। একমূহূর্ত ভাবে তারপর লেখে অনেক বড়ো হও, বাবার মুখ উজ্জ্বল করো। খুব ভালো থেকো।লিখে পাঠাবে কিনা ভাবে। তারপর------একটা ছোট্ট উত্তর আসে------ অনেক ধন্যবাদ।বাবার নামই উজ্জ্বল করার চেষ্টা করছি। আমার বাবা একাই একশো। ভালো থাকবেন।

সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২২
নিবন্ধ

অদৃশ্য সাহায্য (ছোট গল্প)

ট্রেনটা স্টেশনে থামল রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা। স্টেশন প্রায় ফাঁকা, দুচার জন এদিক ওদিক শুয়ে আছে।এতো রাতে ট্রেন থেকে খুব একটা বেশি লোক নামে না। আজ আগের ট্রেনটা মিস হয়ে যাওয়ার পর অর্ণা যখন বলল ওর সঙ্গে যেতে তখন ঋতু গেলোনা; মায়ের ওষুধ ফুরিয়ে গেছে যে। সেগুলো কিনতে গিয়েই আজ ট্রেনটা মিস হয়ে গেলো।স্টেশন থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখল চারিদিক সুনসান। ফোনটাও অফ হয়ে গেছে চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ায়।বাড়িতে ফোন করার ও উপায় নেই। দেখে মনে হচ্ছে লোড শেডিং।ভাগ্য ভালো ছোট টর্চ টা সাথে ছিলো। ঋতু হাঁটতে লাগল।একটু যেতেই মনে হলো পিছনে কেউ আসছে। দেখল একটা ফাঁকা রিক্সা।ঋতু অবাক হলো কই দেখতে পায়নি তো স্টেশন এ। ভাবল অন্ধকারে দেখতে পায়নি।রিক্সাচালক একটি অল্পবয়সি ছেলে। ঋতুকে বললো দিদি আমার রিক্সায় ওঠো আমি ওদিকেই যাবো, তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবো। ঋতুকে ইতস্তত করতে দেখে ছেলেটি বলল দিদি আমি তোমার ছোটোভাইয়ের মতো। এতো রাতে একা যেও না রাস্তা ভালো না। ঋতু আর দ্বিধা না করে উঠে পরলো রিক্সায়।ছেলেটি বেশ ভালো, গল্প করতে করতে এগিয়ে চলল। পথে একটা পুরনো বাড়ি পরে, ওখান টা বেশ গা ছম ছম করতে লাগল। ছেলেটা তখন বলল ভয় কি দিদি আমি আছি। তখন সমীর মানে রিক্সাচালক ছেলেটি বলতে লাগল---- পাঁচ বছর আগে এরকম এক অন্ধকার রাতে তোমার মতো একজন মেয়ে হেঁটে ফিরছিল। তখন ঐ বাড়িটার দাওয়ায় একদল ছেলে আড্ডা দিত মানে মদের আসর বসত। এই পথ দিয়ে মানুষের যাওয়ার উপায় ছিলোনা। মেয়েটি তোমার মতই নিরুপায় হয়ে এই পথ দিয়ে যাচ্ছিল। যেই না ওদের সামনে এসেছে ওর শুরু করলো বদমাইশি। আমি তখন একজনকে নামিয়ে বাড়ি ফিরছি। চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে ওদের বাধা দিলাম। কিন্তু ওরা ছিলো চার পাঁচ জন। আমি তাও ওদের আটকাতে চেষ্টা করলাম। মেয়েটিকে বললাম তুমি পালাও। মেয়েটি আমার কথা শুনে ছুট লাগালো। ওর পিছনে একজন ছুটল। বাকিরা আমাকে মারতে লাগল। শেষে একজন ওদের ফেলে দেওয়া বোতল ভাঙা আমার পেটে ঢুকিয়ে দিল। আমি আর পারলাম না। পরে গেলাম মাটিতে, রক্তে ভেসে গেলো আমার দেহ। ছেলে গুলো আমাকে মরে যেতে দেখে পালিয়ে গেলো।এই দিদি তুই এখানে কি করে এলি? আমি তো তোকে আনতে স্টেশন গেছিলাম, কিন্তু দেখতে পেলাম না।ঋতু ভাই কে কিছুই বলতে পারলো না। শুধু বলল পরে বলবো। এখন ঘরে চল। ওর ভাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। কিছুই বুঝল না।সমীররা এইভাবেই সাহায্য করে যায় মানুষ কে......।।

জুলাই ১০, ২০২২
নিবন্ধ

ফিরে পেলাম (ছোট গল্প)

অনেক দিন পরে আবার যেন নিজেকে ফিরে পেলাম। আমার স্বপ্ন, ইচ্ছা যা প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম আবার যেন ফিরে পাব এই আশা মনে জাগছে।ভাবছেন তো কে আমি! কি বলছি, কেনই বা বলছি? আজ আমার কথা বলব বলেই আমার প্রিয় জায়গায় এসে বসেছি।আমি অনামিকা দত্তগুপ্ত। আমার বাবা অতুল দত্তগুপ্ত পেশায় শিক্ষক, মা তমালী দত্তগুপ্ত গৃহবধূ, কিন্তু গান ওনার প্রথম ভালোবাসা। আমার ঠাম শকুন্তলা দেবী খুব ভালো আবৃত্তি করতে পারেন। আর আমার ছোটো ভাই রূপ দারুণ তবলা আর মাউথ অর্গান বাজায়। বুঝতেই পারছেন কিরকম আবহাওয়ার মধ্যে বড়ো হয়েছি। সবাই বলত আমার গলায় নাকি মা সরস্বতী বাস করেন। গান ছিল আমার প্রাণের চেয়ে ও প্রিয়। আর ছোটো থেকে আমি কবিতা লেখা, গল্প লেখা এসব একটু আধটু করতাম। আমাদের বাড়িতে সকাল সন্ধ্যে গান বাজনা, আবৃত্তি চলত। এইভাবেই বড়ো হতে থাকি। চোখে স্বপ্ন ছিল বড়ো হয়ে হয় সাহিত্যিক হবো নয়তো গানকে নিয়েই এগিয়ে যাবো। আমার লেখা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। আমার বাবার একজন বন্ধু এতে অনেক সাহায্য করতেন। আমাকে খুব স্নেহ করতেন। একটা পারিবারিক সম্পর্ক ছিল আমাদের। রফিকুল ইসলাম তার নাম। তার ছেলে আতিফ আমার ছোটো বেলার বন্ধু। আমরা একসাথে বড়ো হয়েছি। আমি উচ্চ মাধ্যমিকের পর সাহিত্য নিয়ে পড়তে কলকাতার একটি কলেজে ভর্তি হলাম। সাথে গানের জন্য পন্ডিত ইরশাদ খান সাহেবের কাছে ভর্তি হলাম।এই গানের স্কুল আর কলেজ এই ছিল আমার জগত। আতিফ ও একই কলেজে ভর্তি হওয়ায় মা বাবা একটু নিশ্চিন্তে ছিলেন। আমরা কলেজের কাছে মেসে থাকতাম। পাশাপাশি ছিল মেস দুটো। আমাদের মধ্যে এমন সম্পর্ক ছিল সবাই ভাবত আমরা আপন ভাই বোন। বেশ চলছিল কলেজ আর গান নিয়ে আমার জীবন। হঠাৎ করে সেখানে ঝড়ের মতো এসে সব উলোট পালোট করে দিল অন্বয় সাহা। গানের স্কুলে পরিচয়। গুরুজির সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র। একটা অনুষ্ঠানে গুরুজি আমাদের দুজনকেই নিয়ে যান। সেখান থেকেই শুরু। সেই পরিচয় আস্তে আস্তে গভীর হয়। আমাদের কলেজেরই সিনিয়র ছাত্র ছিল। কলেজের অনুষ্ঠান গুলোতেও আমরা একই সঙ্গে গান করতাম। অনি সবসময় বলতো ভালোই হবে আমরা একসাথে সব জায়গায় গান করতে যেতে পারবো। আমার তখন মনে হতো আমি খুব ভাগ্যবতী যে ওর মতো একজনকে পেয়েছি। কলেজের শেষে ও পুরো সময় গানের জন্য দিয়ে দেয়। সেই সময় একটা প্রতিযোগিতায় আমরা দুজনেই অংশগ্রহণ করি। আমি প্রথম আর ও দ্বিতীয় হয়। সেদিন ওর মুখে যেন অন্ধকার নেমে এসেছিল। আমার খুব খারাপ লাগে। এরপর আবার একজায়গায় ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। আমার মনে হয় এবার হয়তো আমাদের সম্পর্কে এর আঁচ লাগবে; কিন্তু অদ্ভুত ভাবে ও চুপ করে যায়। না এবার যেন আমাকে বেশি উৎসাহ দিতে থাকে। আমি খুব খুশি হই ওর কাছে এরকম ব্যবহার পেয়ে।একদিন আমার তখন ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গেছে আমাকে বলে ওর মাকে সব বলেছে আমার কথা। উনি আমাকে দেখতে চেয়েছেন। আমাকে ওদের বাড়িতে নিয়ে গেল। মা, বাবা আর ছেলে এই ওদের ছোটো পরিবার। আমাকে তো এমন ভাবে আপ্যায়ন করলেন ওর মা যেন আমাকে কতদিন চেনেন। আমি ওনার ব্যবহার দেখে আপ্লুত হয়ে গেলাম। বর্ং বাবা মানুষটিকে কেমন যেন লাগলো। এরপর ওর মায়ের জোরাজুরিতে আর আমার ইচ্ছার কাছে মা, বাবা, ঠাকুমা অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমার বিয়ে দেন। এর মধ্যে আমার আর একজনের সাথে সবসম্পর্ক নষ্ট হয় সে হলো আতিফ। বাড়ির লোকের পর আমার সবচেয়ে বেশি হিতাকাঙ্ক্ষী। কিন্তু আমি সেটা তখন বুঝতে পারিনি। ও আমাকে বারবার বলেছিল রুম (আমার ডাক নাম) একটু ভাব ; এত তাড়াহুড়ো করিসনা। আমার তখন মনে হয়েছিল ও যেন চায় না আমার বিয়েটা হোক। মনে অন্যরকম চিন্তা আসছিল। ওকে একদিন খুব অপমান করলাম। ও মুখ নিচু করে সেই যে গেল আর আমার সামনে বিয়ের আগে আসেনি। আমিও যাইনি ওর কাছে। অথচ বোনের বিয়েতে ভাইয়ের যে ভূমিকা থাকে সব আমার বাবার সাথে থেকে পালন করেছে।যাইহোক বিয়েটা হয়ে গেল। বিয়ের পর মাস ছয়েক এখানে ওখানে ঘুরে কাটিয়ে দিলাম। এরমধ্যে আমার রেজাল্ট বেরিয়ে গেছে, আমি মাস্টার্স করার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি।এবার আমাদের দুজনের আবার গানের জগতে ফেরার পালা। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আমার রেওয়াজ করার সময় ওর মায়ের কোনো না কোনো দরকার পরে যেত যেখানে আমার যেতেই হতো। এইভাবে বেশ কিছু দিন চলার পর একদিন ধৈর্য হারিয়ে বলেই ফেললাম আপনার সমস্যা টা কি বলুন তো? যখনই আমি রেওয়াজ করতে বসি তখনই আপনি কোনো না কোনো কারণে আমাকে ডাকেন কেন? আমার শাশুড়ির উত্তরে আমি হতবাক হয়ে যাই। কি হবে সকাল সন্ধ্যা এত চেঁচিয়ে? বিয়ে হয়ে গেছে এবার সংসারে মন দাও।আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। কোনো কথা যোগায় না আমার। ভাবি যে মানুষটা এত প্রশংসা করতো আমার গানের তার কাছে সেটা এখন চেঁচানো!অন্বয় বাড়ি ফিরলে ওকে একথা গুলো বলি। ওর জবাব আমাকে আরও অবাক করে। মা তো খারাপ কিছু বলেননি। উনি চেয়েছেন তুমি ওনাকে একটু সাহায্য করো। গান তো আছেই।মানে! আমি রেওয়াজ করা ছেড়ে তোমার মায়ের সঙ্গে শুধু সংসারের কাজ করবো! এমন কথা তো ছিল না। আমরা একসাথে গান করব এটাই তো বলেছিলে। আমি অন্বয় কে বলি।হ্যাঁ তখন সেটাই মনে হয়েছিল, তাই বলেছিলাম। আজ মনে হচ্ছে মায়ের ও কিছু চাওয়ার থাকতে পারে।আমি যতই দেখছি আর শুনছি অবাক হয়ে যাচ্ছি। আমি কোনো কথা বললাম না এটুকু বুঝতে পারলাম কোথাও একটা ভুল আমি করে ফেলেছি। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারলাম না।একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম আমাকে পড়তে কিন্তু বাধা দেয় না। আমি ইউনিভার্সিটি যাই তাতে ওদের কোনো সমস্যা নেই। যত সমস্যা গান নিয়ে।আমি মায়ের কাছে গেলাম পরীক্ষা দেব ওখান থেকে এই বলে। কিন্তু মন আমার খুব অস্থির হয়ে রয়েছে কী ঘটছে, আর কেন? এই ভেবে। আতিফের সাথে প্রায় এক বছর যোগাযোগ করিনি। আমি বারণ করেছিলাম বলে ও আমার সাথে যোগাযোগ রাখেনি। কিন্তু আমার মনে হলো ওর সাথে কথা বলা খুব দরকার। মা, বাবা কে বলতে পারবো না আমার সমস্যার কথা। একমাত্র ওকেই বলা যাবে। একদিন ওদের বাড়িতে চলে গেলাম। গিয়ে জানতে পারলাম ও মাস্টার্স করতে নর্থ বেঙ্গল গেছে। আমার সব যেন কেমন লাগতে লাগল, বুঝতে পারলাম না কি করব। ফিরে এলাম বাড়িতে। ঠাম কিছু হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। আমার ঘরে এসে একদিন বললেন দিদি ভাই কিছু যদি বলার থাকে আমাকে বল, মনের মধ্যে রাখলে শরীর, মন দুইয়ের ক্ষতি হবে। আম শুধু কেঁদে ছিলাম কিছু বলতে পারিনি।পরীক্ষা হয়ে যেতেই অন্বয় আমাকে নিয়ে যেতে এল। আমি কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাই বললাম মায়ের কাছে আর কটা দিন থেকে তারপর যাব।অন্বয় ফিরে গেল। আমি আরিফকে ফোন করলাম, কিন্তু ও ধরলো না। পাঁচ বারের বার ধরল। বল, কি বলবি। আমি কিছু বলতে পারলাম না শুধুই কেঁদে গেলাম।আরে কাঁদতে কাঁদতেই বল কি হয়েছে।তুই একবার আসবি? তোকে আমার খুব প্রয়োজন।কি হয়েছে আগে বল।আমি বললাম আমার যা মনে হচ্ছে, আর যা ঘটছে।চুপচাপ সব শুনল, তারপর বললো ঠিক আছে দেখছি আমি কবে যেতে পারি। তুই সাবধানে থাকিস। এই বলে সেদিন রেখে দিলাম।মনটা একটু হালকা লাগলো। পরদিন শ্বশুর বাড়ি ফিরে গেলাম। এবার ঠিক করলাম আমি আমার মতো গান করে যাব। সেই মতোই করতে লাগলাম। আর আমার শাশুড়ি মা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন আমার গান যাতে না হয়। অন্বয় ও মায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে লাগলো। ও যেন চায়না আমি গান টা করি।কিন্তু আমি কারনটা বুঝতে পারছিলাম না। অথচ গুরুজির কাছে যখন যেতাম তখন একদম অন্য মানুষ। আমার খুব অবাক লাগতো।একদিন গুরুজির কাছে গান শিখতে গেছি,; উনি বললেন দিল্লিতে একটা মিউজিক সম্মেলন আছে সেখানে আমাদের কয়েকজনকে যেতে হবে।অন্বয় হঠাৎ বলে ওঠে যে অনামিকা যেতে পারবে না। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার সাথে কি হচ্ছে বুঝতে পারিনা।গুরুজি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন কি অসুবিধা আছে? আমার কিছু বলার আগেই অন্বয় বলে ওঠে আমার মা অসুস্থ, এতদিন ওর পরীক্ষা ছিল তাই মা কিছু বলেন নি ; কিন্তু এখন যদি ও আবার গান করতে দিল্লি চলে যায় মা খুব মুশকিলে পড়বেন। আমার অবাক হওয়ার আরও বাকি ছিল। ওখানে কিছু বলতে পারলাম না। বাড়িতে ফিরে যখন জিজ্ঞাসা করলাম যে কেন এরকম বললো, মা তো ভালোই আছেন। তখন মা আর ছেলে মিলে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করলো। যা শুনে আমি নির্বাক হয়ে গেলাম।সেবার আমার যাওয়া হলো না। অন্বয় গেল একাই। আতিফ এইসময় এসে ফোন করে বললো ও এসেছে। আমি শাশুড়িকে বললাম যে বাবার বাড়ি যাব, খুব একটা খুশি না হলেও রাজী হয়ে গেল।এই সুযোগে আমি বাড়িতে যেতে পারলাম শুধু নয় আতিফের সাথে এতদিন পরে দেখা হওয়ায় অনেক কথা হলো। এত কথা যে জমে ছিল আমি নিজেও বুঝতে পারিনি।আতিফের ও অনেক কথা জমা হয়ে ছিল। ওর নতুন প্রেম ও তার কথা সব বললো। বেশ সময় কাটলো অনেক দিন পরে।এভাবেই দিন কাটতে লাগল। কিন্তু মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন থেকেই গেল যে কেন এমন হলো। বিয়ের তৃতীয় বছর, একটা অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা বললেন গুরুজি। আবার অন্বয় বললো আমি যেতে পারবো না। কিন্তু এবার আমি জোর করে বললাম যে যাব। অন্বয় একটু অপ্রস্তুত হলেও কিছু বললো না।বাড়িতে ফিরে শুরু হলো অশান্তি। আবার যা মুখে এল তাই বললো। কিছুতেই আমাকে গানের জগতে যে থাকতে দেবে না এটা বুঝতে পারলাম। একটা কথা আমার মনকে খণ্ডবিখণ্ড করে দিল যখন অন্বয় বললো তোকে আমি ভালোবাসি নি কোনোদিন ; তুই আমার পথের কাঁটা তাই তোকে আমার পথ থেকে সরাতে ভালোবাসার নাটক করে বিয়ে করেছি।আমার পায়ের তলায় আর কিছু রইলো না। আমি ঘরে চলে গেলাম চোখে জল শুকিয়ে গেছে, শুধু ভাবছি কি করব! এমনসময় আমার মাথায় কারো স্পর্শ অনুভব করলাম , তাকিয়ে দেখি আমার শ্বশুর মশায়।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন এখন কাঁদবার সময় নয়, ভালো করে ভাব মা তুই কি চাস। এভাবে নিজেকে মেরে থাকতে পারবি? ওরা তোর বড়ো ক্ষতি করে দেবে। তুই চলে যা এখান থেকে। কথাটা কোনো রকমে বলে চলে গেলেন।আমার কি করা উচিত ভাবতে লাগলাম। এমন সময় আমার শাশুড়ি মা এসে বললেন, রাগারাগি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে হয়ে থাকে ওটা ধরে বসে থাকতে নেই। তোমার চা এনেছি খেয়ে নাও। শাশুড়ির এই মিষ্টি ব্যবহার আমাকে অবাক করলো আর শ্বশুর মশায়ের বলা কথাটা মনে পড়লো। তাই তখন মা কে বললাম, আমি এখন চা খাব না, আমার ভালো লাগছে না। উনি বললেন ,আমার উপর কেন রাগ করছো মা? আমি তো ভালো ভেবেই চা টা আনলাম। তোমার মন ভালো নেই, চা খেয়ে একটু বিশ্রাম নাও সব ঠিক হয়ে যাবে । আমার মনে সন্দেহ দানা বেঁধেছে, এত করে চা খেতে কেন বলছেন! আমি তখন বললাম ঠিক আছে আমি মুখে চোখে জল দিয়ে খাচ্ছি। আপনি গিয়ে চা খান।উনি বললেন না এখনি আমার সামনে খাও।আমার মনে সন্দেহ দৃঢ় হলো। আমি বললাম আমি কথা দিচ্ছি খাব।আমার কাছে একথা শোনার পর উনি যেন নিশ্চিন্তে চলে গেলেন।আমি চা টা না খেয়ে ফেলে দিলাম। এবার ঠিক করলাম আমি একটু নাটক করবো। আতিফের সাথে কথা বলে সব ঠিক করলাম।রাতে শুয়ে রইলাম গলায় ব্যথা বলে। খেয়াল করলাম আমি যখন গলায় ব্যথা বললাম মা, ছেলের মুখে কেমন আনন্দ খেলে গেল।মুখে ভাব করলো যেন খুব চিন্তায় পড়ে গেল।আমি ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, ঘুম ভেঙে দেখলাম পাশে অন্বয় নেই। ভাবলাম রাগ হয়েছে তাই ঘরে আসেনি। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। জল নেই দেখে জগ নিয়ে জল আনতে রান্না ঘরে যাচ্ছি কথার আওয়াজ এলো। একটু এগিয়ে গিয়ে শুনতে গেলাম কে এত রাতে কার সাথে কথা বলছে। দেখি মা আর ছেলে, মা বলছে তোকে বলেছিলাম না মাথা গরম না করে কাজ করতে। ভালো মুখে কাজ হাসিল করতে হয়। কালকেই তো তোকে বললাম ওর গলায় যদি আওয়াজ না থাকে গাইবে কি করে। তুই সব গন্ডগোল করে দিচ্ছিলি। আমি দেখ কোনো রকমে সামলে নিলাম। চা তো খেল আর বলছে গলায় ব্যথা।আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। এ কি শুনছি আমি মানুষ এরকম ও হয়! আমি জল নিয়ে ঘরে এলাম। ভাবতে লাগলাম কি করা উচিত আমার। ঠিক করলাম আর নয় আমাকে এখান থেকে পালিয়ে যেতেই হবে। আমি চুপ করে শুয়ে রইলাম। অনেক রাতে অন্বয় এসে পাশে শুলো, আমার গা টা ঘিনঘিন করে উঠলো। ভাবলাম আমি একৈই ভালোবেসে ছিলাম! সারারাত চোখের জলে বালিশ ভেজালাম। সকালেও শুয়ে রইলাম। একটু বেলা হতেই আমার কথা মত ঠাম ফোন করল, বাবার শরীর খারাপ আমাকে যেতে হবে। অন্বয় যেতে পারবে না বলে দিল। আমি একাই বেরিয়ে পড়লাম। ব্যাগে নিজের সমস্ত দরকারী কাগজ পত্র, গয়না, যা যা নেওয়া সম্ভব সব নিয়ে। ওদের বুঝতে দিলাম না, যে আমি চিরস্থায়ী ভাবেই চলে যাচ্ছি। শুধু শ্বশুর মশায় কে প্রনাম করার সময় বললাম, আসছি বাবা, আশীর্বাদ করুন যেন সফল হই। উনি হাসলেন আমার দিকে তাকিয়ে।সেই বেরিয়ে এলাম। এরপর আতিফের সাথে বাড়ি ফিরলাম। ওকে আমার সাথে দেখে সবাই অবাক হলেও ঠাম সব জানত। আতিফ আর ঠাম বাবা, মাকে সব বললো। সবাই অবাক হয়ে গেলো শুনে। কিন্তু পাশে সবাই। তারপর ডিভোর্সের জন্য আমি আবেদন করলাম। সবাই আমাকে ভীষণ ভাবে আগলে আগলে রাখতো। আতিফের গার্ল ফ্রেন্ড অনীশাও আসত আমার কাছে। আমি ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। অনীশা আর আতিফ যথাসাধ্য চেষ্টা করতো আমাকে ভালো রাখার। এক সপ্তাহ হলো দীর্ঘ দুবছর লড়াইয়ের পর অবশেষে ডিভোর্স হয়েছে। আজ আমি মুক্ত, জীবন আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমি শুধু নিজের স্বপ্ন গুলো কে নিয়ে বাঁচবো। আবার তুলে নিয়ছি তানপুরা, আমার লেখার খাতা। যা আমার বেঁচে থাকার রসদ। আমার পুরোনো লেখার খাতাটা অনীশা নিয়ে গেছে একজন প্রকাশকের কাছে, বলেছেন ছাপা হবে। আমার পরিবারের আর বন্ধুর সাহায্যে আজ আমার আমি কে ফিরে পেলাম।শ্রীমতী রাখি রায়

জুলাই ০৩, ২০২২
নিবন্ধ

Ascension: উত্তরণ (বাংলা ছোট গল্প)

ম্যাগাজিনের কভার পেজে নিজের ছবি দেখতে দেখতে সোহিনী হারিয়ে গেলো অনেক দিন আগে...প্রায় পাঁচবছর আগে মফস্বল থেকে কলকাতা শহরে এসেছিল পড়াশুনা করতে। তবে ছোট থেকেই তার ইচ্ছা ছিলো মডেলিং করার। মা বাবার চোখের আড়ালে সে ব্যাপারে নিজেকে তৈরি করতে থাকে। পড়াশুনা খারাপ করে না, নব্বই শতাংশ নম্বর পেয়ে 12 পাস করে চোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে শহরে এসেছে সোহিনী। কলকাতায় আসার একটা কারন অবশ্যই মডেলিং। তাই এই কলেজে পড়ার সুযোগ টা সে ছাড়ল না। কলেজের থেকে একটু দুরে পিজি পেল। ঐ কলেজ এর অনেক মেয়েই থাকে। মা বাবা তাকে রেখে ফিরে গেলো বাড়ি।বেশ চলছে দিন গুলো পড়াশুনা নিয়ে। দু একজন বন্ধু ও হয়েছে এর মধ্যে।কলেজে সোহিনীর বন্ধুত্ব হয় ঋষিকার সঙ্গে; বড়লোকের মেয়ে, মডেলিং করে, অনেক বন্ধু নিয়ে সারাদিন ঘুরে বেরায়। সোহিনী ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে একটাই কারনে। তবু সোহিনীর মনে একটা প্রশ্ন থেকে যায় কী কারনে ঋষিকা ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে?সোহিনী পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওর স্বপ্ন কেও রূপ দিতে চায় বাস্তবে;চেষ্টা চলতে থাকে। ঋষিকা ওকে সাহায্য করবে বলে।প্রাথমিক অনেক কিছু শেখায় ও। এভাবে দুজন অনেক সময় কাটায়।এর মধ্যেই একদিন পরিচয় হয় ঋষিকার বন্ধু সিধ এর সঙ্গে; আসল নাম সিদ্ধার্থ। ওরা এরকম অদ্ভুত ভাবেই নাম গুলোকে ছোট করে। ছেলেটা কে ভালো লাগেনা সোহিনীর। তবু সহ্য করতে হয় ঋষিকার জন্য।কেনো জানি না ওকে খুব প্রশ্রয় দেয় সবাই।এভাবেই কাটছিল , হটাত সেদিন ঋষিকা যে প্রস্তাব দিল তা শুনে তো সোহিনীর মাথা ঘুরে গেলো। বুঝল কেনো ঋষিকা সোহিনীর মতো মফস্বলের মেয়েকে এতো গুরুত্ব দেয়। নিজের কেরিয়ারের সিঁড়ি বানাবে ভেবেছিল সোহিনিকে সেটা বুঝতে পারে সোহিনী। সে তো এভাবে মডেলিং করতে চায় না। সে এসব কথা শুনেছিল স্কুলের এক বন্ধুর কাছে তখন ও মানতে রাজি হয়নি। আজ ঋষিকার কথা শুনে মনে পড়ে গেলো । না আর ওসব ভাববে না মন দিয়ে পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। না তারপর থেকে আর সোহিনী কথা বলেনি ঋষিকার সঙ্গে।তিন চারদিন হয়ে গেলো সোহিনী কথা বলেনি ঋষিকার সঙ্গে...এভাবে একসপ্তাহ কেটে গেলো। তারপর ঘটল সেই ঘটনা...প্রায় সাতদিন হয়ে গেল সোহিনী ঋষিকার সঙ্গে কোনো যোগযোগ রাখেনা। নিজের পড়া নিয়েই ব্যস্ত। না এর মধ্যে কলেজ ও যায়নি। সামনে পরীক্ষা তাই পড়ায় মন দিয়েছে। একদিন পায়েল ফোন করে কী যেন বলতে গিয়েও থেমে গেল শুধু বলল সাবধানে থাকিস। কিছু বুঝতে পারল না।সোহিনী সব ভুলে শুধু পড়া নিয়ে আছে। সে দিনটা ছিল শুক্রবার; ব্যাচের অন্য বন্ধু যারা ওর সঙ্গে ফেরে আজ পড়তে আসেনি কেউ। তাই সোহিনী একাই ছিলো। আজ ঋষিকা ফোন করে সরি বলল আর সোমবার কলেজ যেতে বলল।সোহিনীর খুব আশচর্য লাগল। কিন্তু বেশি কিছু ভাবল না। রাতে পড়ে একা ফিরছে। রাত প্রায় 10 টা। কলকাতা হলেও পাড়ার রাস্তাটা ফাঁকা ই। ও তাড়াতাড়ি হাঁটতে লাগল। এমন সময় উল্টো দিক থেকে একটা বাইক আসতে দেখে ও একদম রাস্তার ধারে সরে গেলো। নাঃ! পারল না নিজেকে বাঁচাতে। মাথায় হেলমেট পড়ে ছেলে দুটো কী যেন ছুড়ে দিল। উঃ বাবারে! জ্বলে গেলো জ্বলে গেলো বলে রাস্তায় শুয়ে পরলো সোহিনী। তারপর সব অন্ধকার।জ্ঞান ফিরল যখন তখন ও হাসপাতালের বিছানায়। মা বাবা শুকনো মুখে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আবার জ্ঞান হারাল। এভাবে বেশ কিছুদিন কাটলো। আস্তে আস্তে উঠে বসল। না এই তিন মাস তার কাছের কোনো বন্ধু আসেনি ওর খোঁজ নিতে। ঋষিকা বা অন্য কেউ অদী গ্রুপের। শুধু পায়েল রোজ আসত। তিনমাস পর ছাড়া পেল সে; বাড়ি ফিরল। শুরু হলো নতুন লড়াই। না সব যেন কেমন হয়ে গেল। কে এমন করল বুঝেও বুঝতে পারছে না। সেদিন গলাটা খুব চেনা লেগেছিল। কোনো প্রমান নেই। নিজেকেই দোষারোপ করতে লাগল। ঘর বন্দি করে ফেলল নিজেকে। মা বাবা কী করবে কিছুই বুঝতে না পেরে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলেন। হাসপাতালে এই ডাক্তারবাবু খুব কেয়ার নিয়েছেন। তাই ওনার কাছেই গেলেন সোহিনীর বাবা।একদিন ডাক্তারবাবু হাজির হলেন ওদের বাড়িতে। প্রথম থেকেই উনি সোহিনীর প্রতি একটু স্নেহশীল।উনি মাঝে মাঝে আসতে লাগলেন ওদের বাড়িতে। একটু একটু করে ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে লাগলেন; সঙ্গে ছিল সোহিনীর এক বন্ধু পায়েল যাকে ও পাত্তাই দিত না। কিন্তু বিপদে সেই ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।সোহিনীর একটা গুনের কথা যেটা কেউ জানত না পায়েল সেটা আবিষ্কার করে জানায় ডাক্তারবাবুকে। শুরুহয় অন্যভাবে সোহিনীর স্বপ্ন পুরণ করার চেষ্টা। সোহিনী অনেক স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।এবার পায়েল আর ডাক্তারবাবু দুজনে মিলে বোঝাতে থাকে পরীক্ষা দিতে হবে। রাজি হয় সোহিনী। প্রাইভেটে গ্রাজুয়েশন শেষ করে। এবার শুরু অন্য কাজ। পায়েল আর অরুদার সাহায্যে সোহিনী নিজের আঁকার গুণ কাজে লাগায়। ড্রেস ডিজাইন করতে থাকে। খোলা হয় বুটিক। এখানে বলি অরুদা আর কেউ না ঐ ডাক্তারবাবু। হ্যাঁ সোহিনীর নিজের দাদা হয়ে উঠেছে। আজ সেই দাদার হাতধরেই সোহিনীর স্বপ্ন পূরণ। সোহিনীর বানানো ড্রেস এখন চারদিকে খুব নাম করেছে। সাতদিন আগে ওর বানানো ড্রেস পড়ে র্যাম্পে হেঁটেছে ওর মতই অ্যাসিড আক্রন্তরা। অনেক নাম করা ব্যক্তিত্ব এসেছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। ঋষিকাকেও নিমন্ত্রণ করেছিল সোহিনী।সবাই সোহিনীর এই উদ্যম কে সাধুবাদ জানিয়েছে। সব থেকে বড়কথা আজ সেই র্যাম্পের ছবি নাম করা ম্যাগাজিনর কভার পেজ এ।আজ সোহিনী অনেককিছু যেমন হারিয়েছে পেয়েছেও অনেককিছু। অরুণাভ আর পায়েল তার জীবনের দুই নক্ষত্র। আজ এদের দুজনের জন্য সোহিনী হারিয়ে যায়নি। সোহিনীর দুচোখে আজ আনন্দধারা।লেখিকাঃ রাখি রায়রাখি রায়-র কলমেআরও পড়ুনঃ বিষাক্ত গোলাপ - (ছোট গল্প)আরও পড়ুনঃ রক্তের টান - প্রথম পর্বআরও পড়ুনঃ রূপু আমাকে ক্ষমা করিসআরও পড়ুনঃ নতুন প্রভাতআরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- প্রথম পর্বআরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- দ্বিতীয় পর্বআরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- তৃতীয় পর্বআরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)- চতুর্থ পর্বআরও পড়ুনঃ রাজবাড়ির রহস্য (ধারাবাহিক গল্প)-অন্তিম পর্ব

অক্টোবর ২৫, ২০২১

ট্রেন্ডিং

রাজ্য

২০২৬-এর আগে দুয়ারে সরকারের নয়া মডেল, কর্মসূচি ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’

২১ জুলাই শেষ হতেই নবান্ন থেকে নয়া কর্মসূচি ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার দুয়ারে সরকারের মডেলে নয়া কর্মসূচি। একেবারের বুথ ভিত্তিক উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। তিনটে বুথ নিয়ে একটি কর্মসূচি। এই প্রকল্পকে নয়া চমক বলে দাবি করেছে বিরোধীরা।নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আগে আমরা দুয়ারে সরকার কর্মসূচি চালু করেছিলাম। প্রায় ১০ কোটি মানুষ তাতে অংশ নিয়েছিলেন। সেই কর্মসূচির ৯০% কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১০% কাজ কিছু প্রকল্পে এখনও বাকি আছে। অনেকেই আবেদন করেছেন, আমরা সেই প্রকল্পগুলো ডিসেম্বর থেকে চালু করব, বিশেষ করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো যেসব প্রকল্প রয়েছে। দুয়ারে সরকার কর্মসূচির মাধ্যমে বহু মানুষ উপকৃত হয়েছেন। জাতিগত শংসাপত্র, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কৃষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি কর্মসূচি শুরু করছি যার নেতৃত্বে আমি, মুখ্য সচিব এবং ডিজিপি পুলিশ থাকবেন। এই কর্মসূচির নাম আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান। রাজ্য সরকারের তহবিলের উপর নির্ভর করে সরকারি বিভাগগুলির কাজ যথারীতি চলতে থাকবে। MGNREGA তহবিল আটকে রাখা হয়েছে, গ্রামীণ আবাস যোজনার তহবিল আটকে রাখা হয়েছে এবং রাস্তার তহবিলও বন্ধ করা হয়েছে। দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে মানুষ নিজেরাই এসে তাঁদের সমস্যার কথা জানাতেন। আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করতে পেরেছিলাম। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সবাইকে, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশাসনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের, যাঁরা দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।কেন এই নয়া কর্মসবূচি নিয়েছে রাজ্য? তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, পাড়ায় ছোট ছোট সমস্যা থেকে যায়, যেমন কোনও জায়গায় একটা কল বসানো দরকার বা একটা ইলেকট্রিক পোল বসানো দরকার। এই ধরনের বিষয়গুলো নজরে আনা দরকার। আমরা অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি, কিন্তু তবুও কিছু জায়গা হয়তো কোনও কারণে বাদ পড়ে গেছে। এই ধরনের ছোট ছোট সমস্যার সমাধানের জন্য আমরা একটি নতুন কর্মসূচি আনছি। আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান। এই ধরনের উদ্যোগ দেশে এই প্রথম। দেখতে ছোট মনে হলেও এর বিস্তৃতি বিশাল। প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভরতার কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলন দেখা যায় না। সব কাজ রাজ্য সরকারকেই করতে হচ্ছে।কোন পদ্ধতিতে এই কর্মসূচি রূপায়ণ হবে তাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই কর্মসূচি দেশের মধ্যে প্রথম বাংসা চালু করছে বলেও দাবি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান, দেশের প্রথম এই ধরনের কর্মসূচি। এটি একটি উদ্যোগ, যার লক্ষ্য হল গ্রামে গ্রামে ছোট ছোট সমস্যার সমাধান করা। সরকারি অফিসাররা ক্যাম্পে থাকবেন, সাধারণ মানুষের কথা শুনবেন। প্রতিটি ক্যাম্প ৩টি বুথ নিয়ে তৈরি হবে। অর্থাৎ একেকটি ইউনিট হবে একেকটি পাড়া। আমাদের ৮০,০০০-এরও বেশি বুথ রয়েছে, তাই এই পুরো কর্মসূচি সম্পূর্ণ করতে ২ মাস সময় লাগবে। প্রত্যেকটি বুথে অফিসাররা সারাদিন থাকবেন। নির্দিষ্ট একটি জায়গা থাকবে, যেখানে পাড়ার মানুষ তাদের এলাকা সংক্রান্ত সমস্যাগুলি জানাতে পারবেন। অফিসারেরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ ঠিক করবেন।এই কর্মসূচির জন্য একটি বিশেষ তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতি বুথে ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। মোট খরচ ৮,০০০ কোটিরও বেশি টাকা। পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ বা পৌরসভা যেমন কাজ করছে, তেমনই কাজ করবে। তবে এর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই নতুন কর্মসূচি শুরু করছে। এই কর্মসূচি আগামী ২ অগস্ট থেকে শুরু হবে। একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে, যা চিফ সেক্রেটারির নেতৃত্বে কাজ করবে। জেলায় ও রাজ্যে আলাদা আলাদা টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হবে। শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য পুলিশও সহযোগিতা করবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আগামী ২ মাস ধরে সরকার মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে। দুর্গাপুজোর জন্য ১৫ দিনের ছুটি থাকবে, পরে আবার সময় বাড়ানো হবে। তবে সব বুথই কভার করা হবে। এই কর্মসূচির পাশাপাশি দুয়ারে সরকার কর্মসূচিও চালু থাকবে।

জুলাই ২৩, ২০২৫
খেলার দুনিয়া

ম্যাঞ্চেস্টারে মহারণ! পন্থকে নিয়ে স্বস্তি, আকাশের জায়গায় কম্বোজের অভিষেক?

পাঁচ টেস্টের সিরিজ আপাতত ২-১। বুধবার থেকে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে শুরু হচ্ছে অ্যান্ডারসন-তেন্ডুলকর ট্রফির চতুর্থ টেস্ট। দুই দলের একাদশেই পরিবর্তন আসছে। বেন স্টোকসরা ইতিমধ্যেই প্রথম এগারো ঘোষণা করে দিয়েছেন। ম্যাঞ্চেস্টারের আবহাওয়া ও পিচ দেখে ভারত একাদশ ঘোষণা করবে টসের সময়েই।ভারতীয় শিবিরে চোট-আঘাতের সমস্যা। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে এসে ভারত অধিনায়ক শুভমান গিল জানিয়ে দিলেন, আঙুলের চোট সারায় সহ অধিনায়ক ঋষভ পন্থ উইকেটকিপিং করবেন। তবে চতুর্থ টেস্ট খেলতে পারবেন না আকাশ দীপ। লর্ডস টেস্টে তিনি কুঁচকিতে চোট পান। নেটে বল করেননি। ম্যাঞ্চেস্টারে বোলিং কোচ মর্নি মরকেলের সামনে বল করতে গিয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করেননি আকাশ। ফিট হতে তাঁর সময় লাগবে। হাঁটুর চোট সিরিজ থেকেই ছিটকে দিয়েছে অলরাউন্ডার নীতীশ কুমার রেড্ডিকে।ফলে তিনে বি সাই সুদর্শনের খেলা নিশ্চিত। বৃষ্টির ফলে ঢাকা পিচের কাছে গিয়ে তাঁকে শ্যাডো প্র্যাকটিস করতে দেখা গিয়েছে। গিল করুণ নায়ারকে খেলানোর ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন। এই অবস্থায় করুণ ছয়ে ব্যাট করতে যেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। ইংল্যান্ড সফরে তিনটি টেস্ট খেলার কথা ছিল জসপ্রীত বুমরাহর। তিনি ম্যাঞ্চেস্টারেই খেলবেন। ইংল্যান্ডের পিচগুলির মধ্যে ম্যাঞ্চেস্টারেই সবচেয়ে বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে পারেন পেসাররা। যেভাবে বৃষ্টিতে পিচ ঢাকা থাকছে তাতে খেলা শুরুর সময় থেকে উইকেটের আর্দ্রতার কারণে ব্যাটারদের অস্বস্তিতে ফেলতে পারেন সিমাররা, মানছেন শুভমান।এই টেস্টে অংশুল কম্বোজের টেস্ট অভিষেক হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা। একাদশে জায়গা পেতে তাঁর লড়াই প্রসিধ কৃষ্ণর সঙ্গে। তবে প্রসিধের বিরুদ্ধে যাচ্ছে ৫৫-র উপর বোলিং গড়, সাড়ে পাঁচের কাছাকাছি ইকনমি। ইংল্যান্ডে তিনি বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। সেই সঙ্গে তাঁর চেয়ে কম্বোজের ব্যাটের হাত অনেক ভালো। সে কারণেই অংশুল কম্বোজ হতে চলেছেন ম্যাঞ্চেস্টারে ভারতের সারপ্রাইজ প্যাকেজ। উল্লেখ্য, গত বছর রঞ্জি ট্রফিতে হরিয়ানার কম্বোজ কেরলের বিরুদ্ধে ৪৯ রানের বিনিময়ে ইনিংসে দশ উইকেট নিয়েছিলেন।চোটের কারণে ইংল্যান্ডের স্পিনার শোয়েব বশির ছিটকে গিয়েছেন সিরিজ থেকেই। লর্ডসে চোট নিয়ে বল করতে গিয়ে মহম্মদ সিরাজের জয়সূচক উইকেটটি বশির নিয়েছিলেন। স্টোকসদের একাদশে বশিরের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন লিয়াম ডসন। আট বছর পর তিনি টেস্ট খেলবেন। ইংল্যান্ড আত্মবিশ্বাসী, এই টেস্ট জিতে সিরিজ পকেটে পুরে ফেলার ব্যাপারে। ভারতের কাছে সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ।ভারতের সম্ভাব্য একাদশ- যশস্বী জয়সওয়াল, লোকেশ রাহুল, বি সাই সুদর্শন, শুভমান গিল (অধিনায়ক), ঋষভ পন্থ (উইকেটকিপার), করুণ নায়ার, রবীন্দ্র জাদেজা, ওয়াশিংটন সুন্দর, অংশুল কম্বোজ, জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজ।ইংল্যান্ডের একাদশ- জ্যাক ক্রলি, বেন ডাকেট, অলি পোপ, জো রুট, হ্যারি ব্রুক, বেন স্টোকস (অধিনায়ক), জেমি স্মিথ (উইকেটকিপার), লিয়াম ডসন, ক্রিস ওকস, ব্রাইডন কার্স, জোফ্রা আর্চার।

জুলাই ২২, ২০২৫
খেলার দুনিয়া

অম্বরীশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত! সিএবিতে চিঠি আজহারের

সিএবিতে চিঠি পাঠালেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন। তবে এই আজহার ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বা ইডেনের বরপুত্র নন। এই আজহারের বাড়ি পশ্চিম বর্ধমানের উখড়ায়। যদিও এই আজহারের দাবি নয়া মাত্রা যোগ করল সিএবিতে চলা সাম্প্রতিক এক বিতর্কে।সম্প্রতি আইনজীবী সুমন কীর্তনীয়া একটি চিঠি সিএবি, বিভিন্ন ক্লাব-সহ নানা জায়গায় পাঠিয়ে সিএবির স্টেডিয়াম কমিটি ও বেঙ্গল প্রো টি২০ লিগের কমিটির সদস্য অম্বরীশ মিত্রর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আনেন। অম্বরীশ প্রাক্তন ক্রিকেটার, পূর্ব রেলের শিয়ালদহ শাখায় কর্মরত। রেলের নেতাজি সুভাষ ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধিত্ব করেন সিএবিতে। ফলে ভিজিল্যান্স-সহ রেলের কর্তাদের কাছেও অম্বরীশের নামে অভিযোগপত্র পাঠান সুমন। তাঁর দাবি, অম্বরীশ বিভিন্ন ক্লাব, বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলে খেলিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে লক্ষাধিক টাকা তুলেছেন, হাইকোর্ট ক্লাবে বেআইনি কাজকর্ম চালিয়েছেন প্রভাবশালী পরিচয় দেওয়া অম্বরীশ। জালিয়াতি, বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা, দুর্নীতিতে অম্বরীশের সঙ্গী দেবনিক দাস যুক্ত বলেও দাবি সুমনের। উল্লেখ্য, দেবনিক হলেন টাউন ক্লাবের কর্তা। তিনি আবার সিএবি যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাসের পুত্র। দেবব্রত দাসের বিরুদ্ধেও এক কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছে সিএবি ওম্বুডসম্যানের কাছে। সুমন চিঠির সঙ্গে জুড়ে দেন কিছু হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট। যাতে ইউপিআই লেনদেনের মাধ্যমে অম্বরীশ যে টাকা পেয়েছেন তার প্রমাণ হিসেবে। সেই কথোপকথনে উঠে এসেছিল আজহারের নাম। এবার সেই আজহার চিঠি দিলেন সিএবিতে। আর্জি জানালেন, অম্বরীশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি নস্যাৎ করে দিতে। সিএবির বার্ষিক সাধারণ সভার আগে অম্বরীশ ও তাঁর খ্যাতিতে আঘাত দিতেই হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের অপব্যাখ্যা করে ওই চিঠি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি আজহারের।আজহার সিএবি সভাপতি ও সচিবকে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, ক্রিকেট খেলার সূত্রে অম্বরীশের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। খেলার পাশাপাশি তাঁরা নানাভাবে বিভিন্ন ক্রিকেটারকে সাহায্য করে থাকেন। গত মরশুমে হাইকোর্ট ক্লাবকে সহযোগিতা করেছেন অম্বরীশ, সে কাজে তিনিও অম্বরীশের পাশে ছিলেন।ক্রিকেট দল চালাতে অর্থের প্রয়োজন। ময়দানের বিভিন্ন ক্লাব অনুদান-সহ নানাভাবে অর্থ সংগ্রহ করে খেলাধুলো পরিচালনা করে। সে কাজটাই তিনি ও অম্বরীশ করেছিলেন বলে জানান আজহার। তাঁরা সাধ্যমতো বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ক্রিকেটারদের জার্সি, ক্রিকেট সরঞ্জাম কিনে দেন, যাতায়াত, টিফিন, লাঞ্চের খরচ জোগান, অনুশীলনের জন্য প্র্যাকটিস-স্লট বুকিং, পরিকাঠামো তৈরি, আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা ক্রিকেটারদের সহায়তার কাজে সংগৃহীত অর্থ ব্যয় করেন বলে দাবি আজহারের। তিনি আরও বলেন, যে অর্থ সংগ্রহের প্রমাণ দেওয়া হয়েছে তা হাইকোর্ট ক্লাবের ক্রিকেট চালানোর কাজেই তহবিল গড়তে দেওয়া হয়েছে। যাতে মসৃণভাবে এই প্রক্রিয়া চলে সে কারণেই অম্বরীশের ইউপিআই ব্যবহার করে আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এই অর্থ অম্বরীশ ও আজহার ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য তোলেননি বলেই চিঠিতে দাবি করা হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, যাঁর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটকে হাতিয়ার করা হলো তিনিই যখন আসল তথ্য সিএবিকে চিঠি লিখে জানালেন তাতে অভিযোগকারীর দাবি অনেকটাই লঘু হয়ে গেল। অভিযোগকারী সুমন অম্বরীশের কর্মক্ষেত্রে যে ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করেছেন সেটিও সমর্থনযোগ্য নয় বলে মনে করছেন বঙ্গ ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত অনেকেই। মঙ্গল-রাতে আজহারের চিঠি জমা পড়ার পর সিএবি কী পদক্ষেপ করে সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।

জুলাই ২২, ২০২৫
রাজ্য

জাতীয় সড়কে উড়ালপুলের দাবিতে রোড অবরোধ, নবানহাটে জনজোয়ার

আজ সকাল ৮টা থেকে পূর্ব বর্ধমানের মেটেল, নবাবহাট এলাকায় জাতীয় সড়কের উপর ব্যাপক রোড অবরোধ শুরু হয়েছে। মূল দাবিঅতি দ্রুত উড়ালপুল নির্মাণ। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওই অঞ্চলের যানজট ও দুর্ঘটনার সমস্যা চরমে পৌঁছেছে। অথচ প্রশাসনের তরফে কোনো স্থায়ী সমাধান এখনও গৃহীত হয়নি।সকাল থেকেই প্রায় ৩,০০০-র বেশি মানুষ জাতীয় সড়কের উপর জড়ো হয়ে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ শুরু করেন। উড়ালপুল চাই, জীবনের নিরাপত্তা চাইএই দাবিতে মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন স্কুল, অফিস যেতে গিয়ে আমরা দুর্ভোগে পড়ি। বহুবার দুর্ঘটনা ঘটেছে এই রাস্তায়। উড়ালপুল না হলে ভবিষ্যতে আর বড় ক্ষতি হবে। এই অবরোধে প্রচুর ছাত্র ছাত্রী যগদান করেছে, জাতীয় সড়কের দুই প্রান্তেই হাজার হাজার লড়ি বাস প্রাইভেট কার আটকে আছে। দূর্ভোগের চূড়ান্ত অবস্থা।অবরোধের কারণে জাতীয় সড়কের দুদিকেই শতাধিক গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং শীঘ্রই একটি সমাধানে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হবে।

জুলাই ২২, ২০২৫
রাজনীতি

কলকাতায় তৃণমূলের শহিদ দিবস, উত্তরবঙ্গে যুব মোর্চার উত্তরকন্যা অভিযান

একদিকে যখন ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেস শহিদ দিবস পালন করছে তখন উত্তরবঙ্গে উত্তরকন্যা অভিযান করছে বিজেপি। এদিন শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যা অভিযানে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি ড. ইন্দ্রনীল খাঁ সহ উত্তরবঙ্গের বিজেপির সাংসদ এবং বিধায়কগণ। এদিন তিনবাত্তি মোড় থেকে সুবিশাল মিছিল শুরু হয়। মিছিল শেষে চুনাভাটি ফুটবল গ্রাউন্ড থেকে শাসক দলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে বাংলাদেশ থেকে যে হিন্দুরা এসেছেন, তাঁরা মোদীজির চোখে শরণার্থী। অনুপ্রবেশকারী নন। এখানে ভারতীয় মুসলিমরা আছেন। আপনাদের কোনও চিন্তা নেই। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। কিন্তু বাংলাদেশি মুসলিম এবং রোহিঙ্গাদের একজনকেও ভোটার তালিকায় থাকতে দেব না। আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে পরাস্ত করার হুঁশিয়ারি দিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন, চ্যালেঞ্জ করছি ২০২৬-এ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করব। আমি চ্যালেঞ্জ করছি আপনাকে।বিরোধী দলনেতা বলেন, উত্তরবঙ্গে প্রকৃতি যা যা দিয়েছে, সব লুট করেছে। বালি, পাথর, গাছ কিছুই নেই। পাহাড়ের উপর বঞ্চনা হয়েছে। চা-বাগানের শ্রমিকেরা ঠিকঠাক মজুরি পান না। উত্তরবঙ্গের হাসপাতালগুলিতে নিউরোলজিস্ট নেই। কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে এইমস তৈরি করতে চাইলেও রাজ্য সরকার জায়গা দেয় না বলে অভিযোগ তাঁর। বিরোধী দলনেতা এদিন আগামীর কর্মসূচি ঘোষণা করে জানান, আগামী ৪ অগস্ট দলের ৬৫ জন বিধায়ককে নিয়ে কোচবিহারে যাবেন। তখন দলের সব বিধায়ক মিলে উত্তরকন্যাতেও যাবেন বলে জানান তিনি।

জুলাই ২১, ২০২৫
রাজনীতি

“ভোটারদের গায়ে হাত পড়লে গণ আন্দোলন", চক্রান্ত বাংলাতেও! চরম হুঁশিয়ারি মমতার

বেশ কিছু দিন ধরেই কেন্দ্রীয় সরকার ভোটার তালিকায় কারচুপি করছে বলে অভিযোগ করছে তৃণমূল কংগ্রেস সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলো। সোমবার একুশে জুলাইয়ের শহিদ দিবসে হুঙ্কার ছাড়লেন তৃণমূল সুপ্রমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, বিহারে ৪০ লক্ষেরও বেশি ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এবার পশ্চিমবঙ্গেও সেটাই করতে চাও? যদি এমনটা করার চেষ্টা করো, তাহলে আমরা ঘেরাও আন্দোলন শুরু করব। আমরা তীব্র প্রতিবাদে নামব। আমরা তোমাদের কারোর নাম বাদ দিতে দেব না, একজনকেও ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাতে দেব না_এরই পাশাপাশি বিজেপি সরকারের বাঙালিদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তিনি। মমতা বলেন, এই মুহূর্ত থেকেই শুরু হচ্ছে ভাষা আন্দোলন। ২৭ জুলাই থেকে, প্রতি শনিবার ও রবিবার মিছিল ও সভা করতে হবে-বাংলা ভাষার প্রতি যে হিংসা ও অবমাননা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এটা করতে হবে। কোনও পরিযায়ী শ্রমিক বা তাঁদের পরিবার যদি বলে তারা সমস্যায় আছে, তাহলে পাশে দাঁড়াতে হবে, আমাদেরও অবহিত করুন।

জুলাই ২১, ২০২৫
রাজ্য

নিশানায় মহাদেব! চাঞ্চল্যকর অভিযোগ জমা পড়ল সিএবিতে

প্রবীর চক্রবর্তী, দেবব্রত দাস, অম্বরীশ মিত্রর পর এবার সিএবিতে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ জমা পড়ল মহাদেব চক্রবর্তীর নামে। সিএবির ওম্বুডসম্যান, সিএবি সচিব ও কলকাতা পুলিশ ক্লাবের সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন লেকটাউনের বাসিন্দা তথা ক্রিকেট অনুরাগী শ্যামল দাস। গত ১৮ জুলাই। অভিযোগ, সিএবির নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মহাদেব চক্রবর্তী বাংলার ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার অ্যাপেক্স কাউন্সিলের সদস্য হয়ে রয়েছেন। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দফতরের এসিপি (ওএসডি) পদে আসীন থাকা অবস্থায় কীভাবে মহাদেব চক্রবর্তী সিএবির অ্যাপেক্স কাউন্সিলের সদস্য হয়ে গেলেন তা নিয়েই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অভিযোগকারী।এমনকী তিনি মনোনয়নের সময় বা হলফনামায় যথোপযুক্ত নথি জমা দিয়েছিলেন কিনা, তাতে কোনও গরমিল আছে কিনা তা নিয়ে উপযুক্ত তদন্তের আর্জিও জানানো হয়েছে। সিএবির নিয়মের চতুর্থ চ্যাপ্টারে ৩৪(৩)(ডি) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ মূলত উঠেছে মহাদেবের বিরুদ্ধে। এই নিয়মে উল্লেখ রয়েছে, যদি কোনও সরকারি কর্মচারী স্পোর্টস কোটায় নিযুক্ত হয়ে থাকেন একমাত্র সে ক্ষেত্রেই তিনি অ্যাপেক্স কাউন্সিলের সদস্য বা সিএবির পদাধিকারী হতে পারবেন। আবেদনকারীর সংশয় ঠিক এই জায়গাতেই। ফলে ক্লিনচিট পেতে মহাদেব এখন যথোপযুক্ত নথি পেশ করেন কিনা বা তিনি কী পদক্ষেপ করেন সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।আবেদনকারীর আর্জি, মহাদেবকে সব ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে সরিয়ে রেখে শৃঙ্খলা সংক্রান্ত তদন্ত অবিলম্বে শুরু হোক। প্রয়োজনে ফৌজদারি পদক্ষেপ শুরু করা যেতে পারে বলেও আবেদন জানানো হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে, মহাদেবের নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে তাঁর সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বছর বাহাত্তরের ওই অভিযোগকারী। শুধু তাই নয়, এমন গুরুতর অভিযোগে দোষী প্রতিপন্ন হলে মহাদেব যাতে ভবিষ্যতে সিএবিতে কোনওভাবে যুক্ত থাকতে না পারেন সেই ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার আর্জিও জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সিএবির কেউ কিংবা অভিযুক্ত মহাদেব চক্রবর্তী মুখ খোলেননি।

জুলাই ২১, ২০২৫
রাজ্য

'অরুণিমা'র ছটায় স্কুল ড্রপআউট, বাল্যবিবাহ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মাতৃত্বের সংকট থেকে অন্ধকার দূরীকরণ লড়াই

পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ এবং বেশ কিছু শহরতলি অঞ্চলে এক নতুন সামাজিক সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে - স্কুলছুট মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে, যা পরোক্ষভাবে বাল্যবিবাহ এবং অল্পবয়সে সন্তান ধারণের হারকেও উদ্বুদ্ধ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তিনটি বিষয় একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত এবং রাজ্যের নারী-স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সামগ্রিক উন্নয়নকেও প্রতিকূলভাবে প্রভাবিত করছে।রাজ্যের কিছু জেলার ৮ম শ্রেণি বা ১০ম শ্রেণির পর মেয়েদের স্কুলছুট হয়ে পড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। আর্থিক অনটন, পরিবারের পুরাতন সামাজিক ধারণা, এবং বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাব, এই সবই এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে (NFHS-5) অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অঞ্চলে এখনও প্রতি তিনটি মেয়ের মধ্যে একটি মেয়ে ১৮ বছরের আগেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। অনেক ক্ষেত্রে পরিবার স্কুলছুট মেয়েদের দায় মনে করে, এবং যত দ্রুত সম্ভব তাদের বিবাহ দিয়ে দিতে চায়।এই বাল্যবিবাহের পরিণতি হিসেবে ১৬-১৮ বছরের বহু কিশোরী মা হয়ে উঠছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত না থাকা অবস্থায় মাতৃত্ব গ্রহণের ফলে বাড়ছে মাতৃমৃত্যুর হার, অপুষ্ট শিশু জন্ম এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য জটিলতা। সমাজতাত্ত্বিক ও শিশু অধিকারকর্মীরা বলছেন, স্কুলশিক্ষার অকাল সমাপ্তি মানে শুধু পড়াশোনার শেষ নয়এটা একসময়ে সেই কিশোরীর আত্মবিশ্বাস, স্বাস্থ্য, স্বপ্ন, এমনকি জীবনের নিরাপত্তার পরিণতিও নির্ধারণ করে দেয়।বিশেষজ্ঞরা বলছেন কন্যাশ্রী ও সবলা মতো সামাজিক প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার চালু করেছে, অনেক ক্ষেত্রেই এই প্রকল্পগুলি তথ্যের অভাবে সর্বস্তরে পৌঁছায় না। বিদ্যালয়স্তরে মনোবিদ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালানো অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ঠিক সেই সমস্যার গভীরে গিয়ে তার গুরুত্ব বুঝে জেলার সদর শহর থেকে ২৫ কিমি দুরে এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের এক শিক্ষিকার লড়াইকে সম্বর্ধিত করল স্থানীয় প্রশাসন।১৭ জুলাই, বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি-২ ব্লকের পাহাড়হাটী বাবুরাম গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অরুণিমা মুখোপাধ্যায়কে মেমারি-২ ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাল্যবিবাহ-রোধ, স্কুলছুট মেয়েদের আবার পড়াশোনার আবহে ফিরিয়ে আনা ও স্কুলের মেয়েদের বিভিন্ন ভাবে প্রশিক্ষিত করা এবং সার্বিক শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সম্বর্ধিত করা হয়। অরুণিমা নিজে একজন প্রথিতযশা নৃত্য শিল্পী। কত্থক নৃত্যে রাজ্যস্তরে বহু গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে সুনিপুণ নৃত্যকলা পরিবেশন করেছেন। বর্তমানে তাঁর স্কুল বাবুরাম গার্লস হাই স্কুলে-ই তাঁর ধ্যানজ্ঞান শিক্ষিকা অরুণিমা মুখোপাধ্যায় জনতার কথাকে বলেন, আমি পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি দুই নম্বর ব্লকের অন্তর্গত পাহাড়হাটি বাবুরাম গার্লস হাইস্কুলের একজন শিক্ষিকা। গত আট বছর ধরেই আমি স্কুল ছুট এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করে চলেছি সক্রিয়ভাবে। তিনি আরও বলেন, পাহাড়হাটি বাবুরাম গার্লস হাইস্কুলে একটি কন্যাশ্রী আনন্দ ক্লাব গঠন করেছি। তার সদস্যরা আমাদেরই ছাত্রী। তাদেরকে নিয়ে নিরলসভাবে এই কাজটি করে চলেছি। অরুণিমা বলেন, প্রান্তিক পরিবার এবং গরিব পরিবারের মেয়েরা যেহেতু বাল্যবিবাহে বেশি জড়িয়ে পড়ছে, তাই তাদেরকে স্কুল শ্রেণীকক্ষে ফিরিয়ে আনা আমার মূল লক্ষ্য এবং পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে আমি সচেতন করার চেষ্টা করে চলেছি। চাইল্ড ম্যারেজ এবং চাইল্ড প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে তাদের মেয়ের জীবনটা কতখানি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে পরবর্তীকালে সেটা বোঝানোর চেষ্টা করছি। অনেকজনকেই ফিরিয়ে আনতে পেরেছি ক্লাসরুমে। তিনি জানান, মেমারি-২ ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে সম্বর্ধনা পেয়েছি এতে আমি খুবই আনন্দিত এবং আপ্লুত। এই পুরস্কার আমাদের লড়াইকে আরও জোড়ালো করতে সাহায্য করবে। অরুণিমা জানান, এই কাজে আমি সবসময়ই মেমারি-২ নম্বর ব্লক প্রশাসন, এসআই অফিস, বিজুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতকে পাশে পাচ্ছি। সর্বোপরি আমার পাহাড়হাটি বাবুরাম গার্লস হাইস্কুলের সহকর্মী ও বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সকল সদস্যদের পাশে পাচ্ছি। অরুণিমা বলেন, আমাদের এই লড়াই যাঁদের সাহায্য ছাড়া সম্ভব হত না সেই ছাত্রীদের সাহায্য সবচেয়ে বেশী পাচ্ছি। তারা নিজেদের মধ্যেই সচতেনতা প্রসার করছে সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওনা এবং খুবই আনন্দের বিষয়। তিনি জানান, একজন শিক্ষিকা ও বিদ্যালয়ের প্রধান হিসাবে এটা আমার প্রাথমিক দায়িত্ব। তিনি অঙ্গীকার করেন, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন ও শিক্ষা ও সচতেনতা বাড়ানোর এই প্রয়াস তাঁর অব্যহত থাকবে।

জুলাই ১৯, ২০২৫

Ads

You May Like

Gallery

265-year-old "Mukhopadhyay House" in Bhavanandpur, Kalnar, played vermilion on Dasami during Durga Puja
BJP candidate Locket Chatterjee campaigned on the banks of the Ganges from Chandannagar Ranighat to Triveni Ghat wishing New Year.
A living depiction of history with a touch of color, everyone is enthralled by the initiative of the Eastern Railway
Sucharita Biswas actress and model on Durga Puja
Lord Kalabau came up in palanquin; Navapatrika walked towards the mandap - the puja started
On Sunday, the 'Hilsa festival' is celebrated in the city with great joy.
Check out who has joined Mamata's new cabinet
Take a look at the list of recipients at the Bangabibhushan award ceremony
If you are grassroots, you will get ration for free. Lakshmi Bhandar, Kanyashree, Swastha Sathi, Krishakbandhu, Oikyashree, Sabujsathi — you will get all.

Categories

  • কলকাতা
  • রাজ্য
  • দেশ
  • বিদেশ
  • রাজনীতি
  • খেলার দুনিয়া
  • বিনোদুনিয়া
  • সম্পাদকীয়
  • নিবন্ধ
  • ভ্রমণ
  • রাশিফল
  • টুকিটাকি
  • চিত্রহার
  • বিবিধ
  • ভিডিও

Company

  • About Us
  • Advertise
  • Privacy
  • Terms of Use
  • Contact Us
Copyright © 2025 Janatar Katha News Portal